শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১

শম্ভু রক্ষিত; এক তারাবীজের কথা

 শম্ভু রক্ষিত; এক তারাবীজের কথা



কৌশিক বাজারী 

---

'আমার মৃত্যুর পর তোকে আর যন্ত্রণার তাঁত বুনতে হবে না

বল দেখি, আমার লেখা গল্পের, আঁকা মানচিত্রের মধ্যে তুই কে?'

 

  কবি শম্ভু রক্ষিত চলেগেলেন তার মহাপৃথিবীর দিকে।  আদতে শিরোনাম রচনাটির একটি সামান্য পরিচিতি মাত্র। খানিকটা আলংকারিক।  তাতে কবি শম্ভু রক্ষিত হয়ত অল্প হেলে বসে থাকবেন।  অথচ তার কবিতাকে বিন্দুমাত্র ছোঁয়া যাবেনা। অনেকে বলেন, অনেক কবিই, শম্ভু রক্ষিতের কবিতা ধরা যায় না ঠিক, বোঝাও যায় না। সত্যি বলতে কি আমিও তা বুঝিনা।  আর ধরতেও চাইনি কখনো  তাকে নিজের মতো করে। কারণ মনে হয়েছে,  এই না-ধরা না-ছোঁয়ার ভেতরেই তিনি রাখতে চেয়েছেন তার ধ্বনিগুলি।      

   কবিতা সম্পর্কে একটি গদ্যে একবার লিখেছিলাম --

   "আমাদের ভাবনার মূলত কোনো ভাষা নেই। ভাবনা মূলত এক অলৌকিক ভিস্যুয়াল।  তার ধ্বনি ও রঙ নিয়ে  সে এক বোবা জগত। বোবা, অথচ মুখরিত।  মূক মানুষের যেমন অগাধ কথা সারাজীবন চাপা থেকে যায়, সে সব কথা কোনোদিন আর তার বলা হয়ে ওঠে না, এও খানিক তেমন।  তবু ভাবনার ভাষাহীন যে ভ্যিসুয়াল তাকে লিপিতে রাখতে গিয়ে বারবার হতাশ হতে হতে তার সবচে কাছাকাছি পৌঁছনোর নামই হয়ত নির্মাণ বা কবিতা।

   এই হতাশা মূলত ভাবনার অবাধ অসীমত্ব আর অন্যদিকে ভাষার অল্পপরিসরের সীমার চিরকালীন  দ্বন্দ। যেখানে ভাবনাকে কেটে ছেঁটে অনন্যোপায় আঁটিয়ে নিতে হবে।"

   এই কথাগুলি এখানে আরেকবার গুঁজে দেওয়া গেল শম্ভু রক্ষিতের কবিতা প্রসঙ্গে। তিনি ভাবনা আর ভাষার সীমানার মাঝামাঝি রেখেছেন তার লেখাগুলি। এখন একজন মানুষ তথা কবির ভাবনা জগৎ কীপ্রকার জটিল আবর্তের খনি তা সেখানে তলিয়ে যাবার আগে বোঝার উপায় নেই।    তা কখনো ধরার বা বোঝার ঘটনা থাকে না আর, যতক্ষণ না সেই ভাবনাগুলি ভাষায় অনুবাদের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাষায় অনুদিত মহৎ কবিতাগুলি  হয়ত বোঝা যেতে পারে।  শম্ভু রক্ষিত কোনোদিন সেই চেষ্টার ধারেপাশে না গিয়ে উল্টোদিকে গেলেন। তিনি তার ভাবনাগুলি ভাষার সীমার প্রান্তে রেখে ছেপে দিলেন। তিনি ভাবনাকে কেটে ছেঁটে ভাষায় আঁটানোর চেষ্টা না করে এক অন্যপ্রকার ভাষা নির্মান করলেন। যা আমাদের পরিচিত ভাষাগণ্ডির বাইরে এক অদ্ভুত    জগত। যা আমরা ধরতে পারি না। বাংলা কবিতায় দেশি বিদেশি ইং ফার্সি হিন্দি মাগধী পালি সহ এমন সব শব্দ বসালেন যা ভাষাভূমিকে বন্ধুর প্রান্তর করে পাঠককে একা ছেড়ে দিলেন। আমার খুব সন্দেহ হয় জানেন! না সন্দেহ নয়,  এ সত্যিই, শম্ভু রক্ষিতের কবিতায় এমন প্রচুর শব্দ আছে যা এই পৃথিবীর নয়।  তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই শব্দ অন্য কোনো জগতের,  যার ছাট তিনি বাংলা কবিতায় সৈন্ধব লবনের মতো ছড়িয়ে দিয়েছেন অল্প অল্প।  


ভুক্তি


পথিমধ্যে ছাদ-আঁটা থামওয়ালা চত্বরে বসে ঘোর ও মূর্ছনার মধ্যে পড়লাম।

বিশালাকৃতির হিড়িম্বামন্দির সদম্ভে প্যাগোডার মতো দাঁড়িয়ে র‍য়েছে

আজও অক্ষত দরজা জানলার চৌকাঠে 

হরিণ মোষ ও ভেড়ার শিং এর মাথার খুলি।


মোক্কিকো এসেছে মণ্ডি ও মহাসূতে

আমাকে নিয়ে আরেক লোক পালার সূচনা করবে।

সংসারচাঁদ    দস্তা রূপো পাথর ও পুঁতির মালা পরে উষ্ণ অভিবাদন জানাচ্ছে


মোক্কিকো সুসজ্জিতা, একটু হেসে জমলু প্রধানের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে জোংগায়:

আমার মাথায় নিশ্চল সূর্য ধরো

    তোমার তো চক্ষু নেই

         আমি শান্তিই ইচ্ছা করি।  

(অংশ) 


এখানে আরো একটি কথা ভাববার, বাংলা কবিতায় যে জোর করে ভাষা বদলের একটা অভিপ্রায় দেখা যায়,  সেখানে তার কৃত্রিমতা দগদগে ঘা এর মতো। অথবা হাস্যকর কোথাও বা। শম্ভু  রক্ষিতের কবিতায় এইসব অদ্ভুত ভাষা তার চিত্রকল্পের মেজাজের সঙ্গে একেবারেই খাপেখাপ এঁটে যায়। হয়ত এই কবিতার স্থান এবং কাল সম্পর্কে কোনো সুনিশ্চিত ধারণায় আমি আসতে পারিনি। এইসকল চরিত্র নাম কোন ভূমি বা কালখণ্ডের তা আমার অগম্য, পণ্ডিতগণ হয়ত বলতে পারবেন। আমি শুধু এক অতিবাস্তবের ভেতর দিয়ে চলে যেতে পারি এই লাইনগুলির মধ্যে দিয়ে। হয়ত অনেকেই তাই।  ভাষা মানে তো শুধু শব্দই নয়, শব্দ আর ধ্বনি দিয়ে এক অন্য চিত্রভাষার দিকে চলে যাওয়া তার কবিতা।


   ব্যক্তি কবি শম্ভু রক্ষিত সম্পর্কে একাধিক  গল্প এবং মিথ থেকে এমনও মনে হয় যে তিনি নিজেও আদৌ এ পৃথিবীর কেউ ছিলেন কিনা! তার অদ্ভুত গল্প গুলিও এ জগতের নয়। কবি সুজিত সরকার লিখছেন--

"তিনি প্রতিবারই আমাদের সঙ্গে কফি খান, অসম্পূর্ণ বাক্যে কথা বলেন, হঠাৎ হঠাৎ খ্যা খ্যা শব্দে হেসে ওঠেন, প্রতিবারই কফি হাউস থেকে বেরিয়ে গল্প করতে করতে কিছুদূর হেঁটে আসেন, তারপর প্রতিবারই হাওয়ায় মিলিয়ে যান। তিনি কোথায় থাকেন তা আজও আমরা কেউই জানি না। তিনি লিখেন 'আমি পৃথিবীর কত বাইরে, কত উপরে আছি'।"


  তাহলে দেখা যাচ্ছে তার কাছাকাছি থাকলেও তিনি সেই নিকটত্ব স্বীকার করতেন না। কারণ তিনিই প্রকৃত তারাবীজ কবিদের শেষ প্রতিভূ। তারাবীজ। তিনি নিজেই ঠারেঠোরে,  কখনো বা প্রকাশ্যেই কবিতার কোনো পংক্তিতে স্বীকার করে নিয়েছেন বিষয়টি। তিনি তারাবীজ। স্টার সিড। অন্যকোনো নক্ষত্রমণ্ডলীর অন্যকোনো গ্রহের থেকে ছিটকে আসা প্রাণ। মূলত ছদ্মবেশী।     


আমার লেখার সপক্ষে প্রমাণ


 'সাসানীয়'


পৃথিবী দগ্ধমাটির গর্ভে উড়ে এল যখন, তখন আলো

সৃষ্টি হবার আগে তার জ্যোতি আমাকে আত্মা দিয়ে গিয়েছিল।


পৃথিবী তখন মূলছাড়া, সরলরেখায় টানা, তখন আমার পা নেই

হালকা অবিক্লিব স্বর্ণবর্ণ ঘোড়ায় চড়ে সূর্যকে দক্ষিণ দিকে

দেখতে দেখতে তাই আমি এই সোনার ঢালুস্থানে হাত মেলেছিলাম।

(অংশ)   

 

এই কবিতার বইটির নাম 'আমি কেরর না অসুর'।  এই 'কেরর' মানে কী, আমি জানিনা। এটা সম্ভবত সেই জাতীয় শব্দ। ভিনগ্রহী।  


তিনি যে ছদ্মবেশী, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এই পৃথিবীতে প্রচুর মানুষ রয়েছে। সবার সঙ্গে সবার দেখা হবে না, নিয়ম নেই। কিছু মানুষের সঙ্গে কিছু মানুষের দেখা হওয়া নিয়ম। যে নিয়মে বিবাহ, বন্ধুত্ব, প্রেম ও শত্রুতা হয়। অল্প চেনাও হয় কেউ কেউ। অল্প চেনা হিসেবে শম্ভুদার সঙ্গে সেবার দেখা হল।  

   আমি আর সুকুমার, এলোমেলো ঘুরছি লিটিলম্যাগাজিন তাঁবুতে। কবি শম্ভু রক্ষিত একটা চেয়ারে এক পা তুলে বসে হেলান দিয়ে তামুক লাগাচ্ছেন দাঁতে। আমরা মহাপৃথিবী ওল্টাচ্ছি। প্রত্যেক সংখ্যাতেই শেষ পৃষ্ঠায় শম্ভুদার কবিতা। এক পাতা জোড়া। আশ্চর্য,  তার এক লাইন কমও নয়, বেশিও নয়! আমি বল্লাম,  শম্ভুদা, এরকম কীকরে হয়? প্রতিটা কবিতা পুরো এক পাতাই! শম্ভুদা ঘাড় ঘুরিয়ে, তামুক ফেলে, গায়ের চাদর ঠিক করে, ডান পা নামিয়ে বাঁ পা তুলে বল্লেন -- হয় না। লিখি ত অনেকটাই, ওই এক পাতায় যতখানি ধরে, ছেপে দিই। কম পড়লে দু-চার লাইন লিখেও দিই।  বলে গম্ভীর হয়ে রইলেন। আমি আর সুকুমার, তখনো তত ইস্মার্ট নই, অন্তত শম্ভুদার এসব মজাকি বোঝার মতো, হাঁ হয়ে রইলাম খানিক...


  দ্বিতীয় গল্পটা সুকুমারের সঙ্গে ফোন নং আদান প্রদানের। তখনো মহাপৃথিবীর টেবিলে দাঁড়িয়ে। এটা সেটা গল্প। সুকুমার আমার চে ইস্মার্ট ,  আলাপ করিয়ে দিল। এ কৌশিক, একটা পত্রিকা করে। 'মিরুজিন' দিলাম। তিনি হাতে ধরে বল্লেন - এ তো অনেক খরচা। গলার স্বর নিস্পৃহ। 'তুমি ত বড়লোক!' সুকুমার বলল না না ও বেকার। উনি আমার দিকে অপাঙ্গে চেয়ে বল্লেন ধপধপে জামা-কাপড়, ফোন আছে তোমার?, আমি হ্যাঁ বল্লাম। উনি হাসলেন, অর্থাৎ তাহলে আর অভাব কিসের। আমি সংকোচে চুপ করে রইলাম পরিস্কার পোশাক আর পকেটে ফোন থাকার লজ্জায়। উনি দাঁতে তামাকু ঘসতে ঘসতে উদাসীন হতে হতে পত্রিকাটি একপাশে নামিয়ে রাখলেন।     

  তো এই সময় সুকুমার শম্ভুদার কাছে ফোন নং চাইলেন। তারপরের ঘটনাটা সুকুমারের জবানীতে দেখা যাক। গতকালই ও লিখেছে এটা--

     "হ্যাঁ, এমন একটা সময় ছিল, কৌশিক না গেলে আমি বইমেলা যাবার কথা ভাবতামই না, এবং কৌশিকও সম্ভবত তাই। তো শম্ভুদাকে নিয়ে কৌশিকের গল্পটির পর আমার সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় গল্পটি এইমতো ( আরও আছে কিন্তু)---

পাখিরার জন্যে শম্ভুদার লেখা নেব। সব সময় তো আর দেখা হয় না আমাদের। একদিন বইমেলায় শম্ভুদাকে বললুম, ফোন নাম্বার দিন, একটা ফোন নাম্বার থাকলে খুব সুবিধে হয়। শম্ভুদা 'লেখ্' বলতেই কাগজ-কলম নিয়ে আমি রেডি। চটপট করে বলে গেলেন। গুনে দেখি, ১০ টা ডিজিটই আছে। তবু বললুম, শম্ভুদা, আরেকবার বলুন, আমি একবার মিলিয়ে নিই। 'তুই বল, আমি মেলাই'। ডিজিটগুলো পড়ে শোনাতেই বলেন,'ঠিক আছে'। তারপর কবিতার জন্য তাগাদা দিতে গিয়ে দেখি, ওই ফোন একজন মহিলা ধরেছেন। খুব ভদ্রস্বরে বলি, শম্ভুদা আছেন, ওনাকে একটু দেবেন? মহিলা বলেন, এখানে সেরকম কেউ থাকে না। ন্যূনতম আশা এবং অনেকখানি আশঙ্কা নিয়ে আরও কয়েকবার ডায়াল করেছিলাম ওই নাম্বারে। কিন্তু সেই একই কণ্ঠস্বর, শেষমেশ তার চরম গালাগালি খেয়ে ক্ষান্ত হই। পরের বছর বইমেলায়, মহাপৃথিবীর টেবিলে গোটা ঘটনাটি শম্ভুদা আমার মুখ থেকে খুব আগ্রহ নিয়ে শোনেন এবং অবশেষে মুচকি হেসে বলেন, তুই একটা নাম্বার চাইলি, আমিও দিয়ে দিলুম।

প্রণাম শম্ভুদা! দণ্ডবৎ!"


   এইসব গল্পের ভেতর কবি শম্ভু রক্ষিত চলে যেতে যেতে একেকটা মিথের ভেতর একেকরকম ভাবে জ্বলে উঠবেন। ডান পা নামিয়ে বাঁ পা তুলে বসবেন, তামুক মুছে নেবেন চাদরে, সুদূর মহাপৃথিবী ভেদ করা উদাস তাকিয়ে অগ্রাহ্য করবেন হালচাল, আর জীবনকে একটা ক্যালাইডোস্কোপের ভেতরে না দেখে তিনি জগতকে ক্যালাইডোস্কোপের ভেতর বসিয়ে ফুটোতে চোখ রাখবেন। ফলে তার কবিতা নানা ডিজাইনের জগতটুকরের   আলপনার মতো দেখাবে। যা পড়লে বোঝা যায় রঙ রেখা শব্দ আলো মুহূর্তে তার অবস্থান বদল করছে। জগত আনচান করছে। আর এত বড় জগৎ, যা পৃথিবীর মানুষের অগম্য, ভাষার অগম্য, তা আমরা বুঝতে পারবনা। আমাদের তৈরি ঝকঝকে কৃত্রিম জগতের প্রেক্ষিতে তার ওই এক পা চেয়ারে তুলে বসে থাকা, তামুক লাগানো,  আর আমাদের সাজানো সমস্ত কিছুকে অস্বীকার আর কিছুই নয়, একজন তারাবীজের জীবন ব্যাতীত।   


"ক্রমশঃ সেই সব মুহূর্ত, ধনুক আর তুণ, রামধনুর মত শেষ তুষারান্তর

সৌরপৃষ্ঠের বর্ণছত্র যেন অতিক্রম করে গহ্বর অতল, তোমার অধুনালুপ্ত স্পর্শ 

অরণ্যের মত পড়ে থাকে রূপান্তর প্রশান্তির গভীরে, অন্তর্নিহিত হয়ে বিশ্লেষিত    

উদ্ভাবনার ঊর্ধ্বে,  অন্ত্য অনাবৃষ্টির যুগে এই তন্ময়তা, জীর্ণপাতা পরীক্ষা,

কৌতুহল চরিতার্থ করে যাও। বেশী সুযোগ, একটি সংবাদ: পৌরাণিকদেবী

আফ্রোদিতে হাথোর-মিউজ ব বেনখাজির ভেনাসের চেয়েও সুন্দর স্বর্গীয়

উজ্জ্বল রূপ তোমার, পাথরে বেলুন,  আঃ এই উন্নীত আলোড়ন অপার্থিব

জগতের মত পরিশুদ্ধ ও আরো পবিত্র নতুন; আশ্চর্য মনঃসংযোগ, ঘৃতাচির

অভিজ্ঞতা ফুরিয়ে যাবার শেষ এই ধর্মীয়-বেদন,  উদবর্তনের  সম্ভবনা;

ঈশ্বরের কাছে রক্ষিত তার অস্তিত্বের রূপ বা তাঁর প্রতিমার   "                  


   কারন,   এইসব যখন লিখছি, সেই কবির দেহাবসানের পর তার এ জন্মের গ্রামে, এবারের এই গ্রহের এক অখ্যাত প্রত্যন্ত গ্রামে তার অন্তিম যাত্রার ছবি স্যোসালমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। এই গ্রহের নিয়ম অনুযায়ী এক কবিতাখ্যাত ব্যক্তির যা হয়, অথবা অভিজাত শিল্পীর অথবা দেশ চালনার  সঙ্গে যুক্ত মানুষের বিদায় দৃশ্যের সঙ্গে অথবা সাধারণ মধ্যবিত্ত গেরস্থের সঙ্গেও যার কোনো মিল নেই। গ্রামের অতিসাধারণ ঝোপঝাড়পূর্ণ একটা মেঠো পথ, বাঁশের মাচায় খেজুর পাতার চাটাইয়ে  মোড়া তার দেহ, আর চারজন শব্বাহকের পিছনে আদিগন্ত এ গ্রহের এবড়োখেবড়ো মাঠ, বেঁটে গাছ,  সামনে একটা পুকুর, তার সবুজ জলে  চারজন স্থির শববাহকের ছায়া পড়েছিল।  কাঁধে তিনি।


"আমি রক্তমাখা হাসি ও সূক্ষ্মতা নিয়ে অস্পষ্ট চীৎকার করে

আবার একাকী পথে ফিরে যাব

এবং আমি ঘৃণাভালবাসাপ্রেম সুন্দরের জন্য,

    যুদ্ধঅভাবের   জন্য দীর্ঘ-সবুজ হব

আহত উদ্ধত প্রিয়-পরীদের অগণিত মুখ, মুখের মিছিল  নিয়ে  ফিরে যাব আমি।"


তিনি লিখে রেখেছিলেন। তাঁকে প্রণাম।

...




      


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন