কবিতা ও কবিতার বই































পরিনামহীন, শিরোনামহীন

পরিনামহীন, শিরোনামহীন
কৌশিক বাজারী রচিত কবিতা বই
পরিকল্পনা ও অলঙ্করণ : সজল কাইতি
প্রকাশকাল: ২০০৬
প্রকাশক : সজল কাইতি
বৈলা পাড়া। বিষ্ণুপুর। বাঁকুড়া। ৭২২১২২







উৎসর্গ : অন্য প্রান্ত গর্ভপোড়া দেশ...










,
স্বপ্নের শেষ আর ভেঙে যাওয়া ঘুম নিয়ে উঠোনে দাঁড়াই
মনে পড়েনা মনে পড়েনা, ভোর অন্ধকারে
ঘুমের ভিতরে ঠিক কার মুখ দুয়ারে দাঁড়ায়...




২.
যদি কোন দিন অন্ধ হ'য়ে চলে যাই সূর্যের বাগানে
কে দেখাবে এইসব বর্ণ-গন্ধ-ধ্বংসমালা-স্তপ---

তুমি না ছন্দ শিখলে আজ তোমাকে শেখাব তবে নদীর ভাঙন...




৩.
তখন মৃত নক্ষত্রের দাগ লেগে ছিল তোমার ঠোঁটের আশেপাশে
সেই মিথুন দৃশ্যের মাঝে ভয়াবহ দানবের মুখ ঢুকেপড়েছিল
সেই থেকে জীভের কোরক গুলি আজোবধি শুষ্ক হ'য়ে আছে

 এখন তোমার ঠোঁটের নীল মাছি কৃষ্ণগহ্বরে উড়ে যায়...




.

৪.
গুহা-মাংসের মতো জুড়িয়ে যায় আমাদের পূর্বরাগ-কথা
আলজীভ পাকিয়ে পকিয়ে ধ'রে আগুন সমস্ত শুষে নিলে
                          পতিত শরীর জুড়ে মাথুর --- মাথুর ---



৫.
ভালবাসা
সুন্দরতা
প্রেম
ঘৃনা
প্রতিঘাত

 এই শর্তে তোমার সামনে পেতেছি হাত...







৬.
ধ্যানস্থ আমার অরণ্যে এখনো ধোঁয়ার আশ্বাস
ধ্যানস্থ ধুনির ভিতরে পুড়ে খাক্ হচ্ছে এক আদীম বল্কল
ধ্যানস্থ আমার পিঠে পা রেখে হেঁটে গেছে দ্রুতগামী ম্যামথের দল...







৭.
মায়ের চুলের থেকে উড়ে আসা সুগন্ধি বাতাস
লিখে রাখে আমাদের ছেলেবেলা গুলি
                        মা ঠিক বোঝেনা পুরোপুরি
তার চুলের ভিতরে কি কি ঘটনার ঘনঘটা আছে..



৮.
 এখন মায়ের হাতে শিশিরের দাগ; এসব কাব্যের কাব্য,
মা ঠিক বোঝেনা কিছু, তাই
তার আঙুলের ফাঁক বেয়ে অমসৃণ জীবাণুর গতি...






৯.
এমুহূর্তে মহান মেঘদূত কারো না-লেখা চিঠি, কারো হারিয়ে ফেলা চিঠি
মুখেনিয়ে উড়ে যেতে যেতে ফেলে দিচ্ছে ভুল ঠিকানায়...
 জন্ম নিচ্ছে ভুল ভালবাসা...


১০.
পাখির ডানার থেকে খসে পড়া পালক
                                     পড়ে আছি এইখানে
একা, অসহায়...
তুমি এসে তুলে নেবে, কলম বানাবে,
                                      হে কবি, তাই...





১১
এই মুহূর্তে এক সমুদ্রের উপর বৃষ্টি পড়ছে,কোন অক্ষাংশ জানিনা
এই মুহূর্তে এক অরণ্যের উপর বৃষ্টি পড়ছে, কোন পৃথিবী জানিনা
এই মুহূর্তে এক আগ্নেয় সমুদ্রের উপর ঘনিয়েছে মেঘ...

 ১২.
পঞ্চশত আলোকবর্ষ দূরে যে তারার শেষ আলো নিভে গেল এই
পাঁচশ বছর পর আমার সন্তান কোনো উঠোনের অন্ধকারে বসে
                                               সেই আলো দেখে যাবে ঠিক...







 ১৩.
একটি আতসবাজী উড়ে গেছে আকাশের গায়ে,
আর তার শীর্ণ নীল আলো
এসে পড়ছে, শশ্মানে শয়ান এক সুতোহীন শবের শরীরে...



১৪.
নিজের ভিতরে এক সুড়ঙ্গ কেটেছি মাগো
অন্য প্রান্ত দেখ তোর গর্ভে গিয়ে শেষ
এপ্রান্তে আগুন জ্বলেছে আজ
অন্য প্রান্ত তাই তোর গর্ভপোড়া দেশ...





 ১৫.
ঝটিকা সফর সেরে ফিরে এসে দীর্ঘচঞ্চু পাখি
পুনরায় জেলে দিল অগ্নিময় চুলো
ঝটিকা সফর থেকে উড়ে গেলে দীর্ঘচঞ্চু পাখি
শুধু পড়ে থাকে অবিরল সফরের ধুলো...

১৬.
কোথায় বাজছে রণভেরী ? বুকের উঁচুতে গুম গুম
কোথায় উঠছে কালো ধোঁয়া
পথের পিছনে কালো ঝড়
মাথার ভিতরে ঘুম,নি:ঝুম,নি:স্তব্ধ চরাচর...






১৭.
শরীরে শোনিত স্রোতে হাহাকার ডেকে যায় তৃষ্ণার্ত চাতক
তৃষ্ণার্ত চাতক এসে ডেকে যায় শোনিত শরীরের হাহাকার
শরীরের হাহাকারে ঢেকে যায় শোনিতের স্রোতে এক তৃষ্ণার্ত চাতক
 শরীরের স্রোত থেকে উঠে আসে তৃষ্ণার্ত চাতক হাহাকার...

১৮.
কতখানি ভুমি আজ চূর্ণ হল ভুমির আঘাতে
শ্বাসে ও প্রশ্বাসে আজ ধাবমান কত গুলো ঝড়
কতগুলি পর্ণমোচী ভুলুণ্ঠিত ঘোর বজ্রাঘাতে
অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেল তোমার আমার বালুচর...





১৯.
আমার ঘরেও আলো, অন্ধকার লড়ে যায় সমানে সমানে--
আমার ঘরেও হাওয়া, সে হাওয়ার অন্য এক মানে--




২০.
 দশটি জাহাজ যদি জলে ভাসমান
দশটি জাহাজ তবে আসমানে ভাসে
একটি জাহাজ শুধু ডুবে যেতে যেতে
জড়িয়ে ধরছে তার নিজের মাস্তল...





২১.
রঙীন গাছের থেকে রঙীন পাখিটি গেছে উড়ে
রঙ তো ফুরিয়ে গেছে, রঙের ভিতরে ভাঙা কাজ
তুলে নিয়ে সাজিয়ে রেখেছো এই দীন-হীন ঘরে

সফেদ সূতোয় ফোঁড় তুলে কাঁথায় তুলছো কারুকাজ...





২২.
তমগুনে ভরা কবিতার ডাল হেলে আছে আজ রাত্রে
অন্ধকারের বিছানার পাশে ঝ'লে মৃত নক্ষত্র
কাত হ'য়ে শুই, একপাশে চাঁদ,তারা নেশাতুর নিস্প্রভ
তোমাকে লিখছি কালো কাগজেই অপ্রেমে ক্ষতপত্র...





(সংযোজন)
পরিণামহীন, ২০১৪

কৌশিক বাজারী


১.
রক্তিম হে, এসেছো আহ্নিক শেষে
দিনের আলোর মতো নীল পূর্বাকাশ !
প্রাচীন, অধুনা, অল্পদাগী, নানা মতো পৃথিবীর
উদ্ভাসিত পাপ আর রিক্তমহাকাশ

২.
জ্যোৎস্নায় ফুটিফুটা হয়ে আছে
গ্রীষ্মরাত্রির কালো মাঠ।
সহস্র বছর হল ?
কুরুক্ষেত্রে রক্তকাদামাখা সেই ইচ্ছামৃত্যুখাট ?

৩.
পাবে না  পাবে না কিছু নবজন্ম ভাবীকালে এই ছিন্ন বাসে
ছড়ানো ছিটানো কিছু মাতৃরক্ত, মন্দির চাতালে দূর্বাঘাসে...




৪.
সম্মুখে যতই বলি, যাক সব জলাঞ্জলী
যতিচিহ্নে রতিচিহ্নে ভয়ঙ্কর শাপে
আসলে সমস্ত পাপ কল্কা আঁকা, তোরঙ্গতে ভরা,
ঝুলিছে যমপটে দেয়ালের মাপে...।

৫.
সূচীছিদ্র ক্যামেরায় উল্টে আছে বেবাক পৃথিবী
                               আর জীবন অন্তর্গত আলো
রজনীগন্ধা তোর আকাশ উল্টে আছে পুকুরের জলে
ওগো, গন্ধসুধা এইবেলা ঢালো...



৬.
হরিষে বিষাদ এসে ঢেকে দিল তোমার জীবনী,
                                   কলম প্রয়াস অভিযান।
মায়া কুহকিনী তার খাপলা জাল ছুড়ে ফেলে
মহাশূন্যে মাছ ধরে যান...



আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে,
                       আকাশের ওপারে আকাশ ?
নগ্ন নির্জন হাত অভিমানে মুছে নেয় নির্জন সাক্ষর,
নিজ শুভনামজীবনানন্দ দাশ ।

৮.
ল্যাপিস-লাজুলি চূর্ণ নীলবর্ণ রঙ দিয়ে
জাগিয়ে তুলছি এই বহমান জাতক জীবন
অবলোকিতেশ্বর গেছে কোন পথে?
তার ভিক্ষাপাত্রে পড়ে আছে কিছু অন্ন কিছু অনশন

৯.
সম্মোহনের থেকে ফিরে এসে বোবা জাদুকর
চলে গেছে চিরায়ত আলখাল্লা নিয়ে,
ঐ জাদুময় বিষাদচুড়ার থেকে
পাহাড় পড়ছে অতলের দিকে গড়িয়ে 


১০.

তোমাকে ভালবেসে হত্যা করেছি তাই আমার নাম দিলে ওথেলো, হায়
দেসদিমোনা তুমি ? রুমালে কার নাম ? অন্ধকারে লড়ে ও-কার ছায় ?
আমারই চেতনার অবশ হাতগুলি ধরেছে চেপে গলা , ঘুমন্ত...
তুমি কি জেগে ছিলে ? জানতে সবটাই ? তবুও হে আগুন নিভন্ত ?


১১.
আমার ব্যথার কাছাকাছি কিছু বলো
পারাবার থেকে হাওয়া বয় খুব শান্ত
যদি বুকের উপরে ঘনঘোর কিছু দু:খ
রাখো আমার ব্যথার ওপরে ও হাত
ক্লান্ত...


১২.
একবার আলো, একবার অন্ধকার হও।
তোমার অতীত তুমি গড়িয়েছো পশ্চিমের দিকে
হে জীবন, ভবিতব্য  সম্মুখেতে বও...




1 টি মন্তব্য: